ই সিম কি? ই সিম (e SIM) ব্যবহারের সুবিধা ও অসুবিধা

ই সিম কি ও ই সিম ব্যবহারের সুবিধা অসুবিধা

বাংলাদেশে প্রথমবারের ই সিম মত চালু করেছে টেলিকম অপারেটর গ্রামীণফোন। ই সিম হল নতুন ধরণের সিম প্রযুক্তি। ই সিম যা পুরো সিম ব্যবস্থাকে নতুন করে সাজাবে। আমরা অনেকে জানি না ই সিম কি? ই সিম এর পূর্ণরুপ কি? ই সিমের কাজ কি? কোন মোবাইলে ই সিম সাপোর্ট করে এবং ই সিমের সুবিধা ও অসুবিধা । আজকে আমরা ই সিম সম্পর্কে জানবো।

ই সিম (e SIM) কি

মোবাইলের ই সিম হল একধরণের চিপ যা ই সিম সাপোর্টেড ডিভাইসের মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত থাকবে। যেহেতু এই সিম মাদারবোর্ডের সাথে সংযুক্ত থাকবে তাই ই সিম খোলা বা লাগানোর কোন সুযোগ থাকবে না। ই সিম যে সব মোবাইল ফোনে সাপোর্ট করবে সেই সব মোবাইলে সাধারণ সিমকার্ড ব্যবহারের মত কোন স্লট থাকবে না। ই সিম সাপোর্টেড ডিভাইসে সিমকার্ড পরিবর্তন করা না গেলেও ই সিমের সাহায্যে অন্য যে কোণ অপারেটর বা নাম্বার পরিবর্তন করা যাবে। একই সাথে একাধিক নাম্বার ব্যবহ্যার করতে পারবেন ই সিমের মাধ্যমে। তাই বলা যায় বর্তমান এই প্রযুক্তির সময়ে সাধারণ সিম কার্ডের সমাপ্তি ও আগামীতে সিমের ভবিষ্যৎ হবে ই সিম।

ই সিম (e SIM) এর পূর্ণরুপ

ই সিম কি আমরা জানলাম। ই সিম (e SIM) এর পূর্ণরুপ হল এমবেডেড সাবস্ক্রাইবার আইডেনটিটি মডিউল।

E = Embedded
S = Subscriber
I = Identity
M = Module

ই সিম (e SIM) এমবেডেড সিম নাম বেশি পরিচিত।

কোন মোবাইলে ই সিম (e SIM) সাপোর্ট করে

ই সিম কি তা আমরা জানলাম। এখন জানবো ই সিম কোন মোবাইলে সাপোর্ট করে।

  • আইফোনঃ আইফোন ১৩ সিরিজ, আইফোন ১২সিরিজ, আইফোন ১০, আইফোন ১০এস এবং আইপ্যাড প্রো।
  • স্যামসাংঃ স্যাসসাং এর গ্যালাক্সি এস২১ সিরিজ, এস২০ সিরিজ, গ্যালাক্সি ফোল্ড, জি ফ্লিপ এবং নোট ১০ এর সব ভার্সন।
  • গুগল পিক্সেলঃ গুগল পিক্সেল ৬ সিরিজ, পিক্সেল ৫ সিরিজ, পিক্সেল ৪ সিরিজ এবং পিক্সেল ৩ সিরিজ।
  • মটোরোলাঃ মটোরোলা রেজার (কোনো সিম স্লট নেই, শুধু ই-সিম রয়েছে)।

ই সিমের (e SIM) সুবিধা সমূহ

ই সিমের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল খুব সহজে মোবাইল অপারেটর পরিবর্তন সম্ভব। ই সিমে মোবাইল অপারেটর পরিবর্তন করতে হলে আপনাকে মোবাইলে সিম তুলতে হবে না। সেটিংস এ গিয়ে আপনি ই সিমের মাধ্যমে অন্য অপারেটর সংযুক্ত করতে পারবেন। ই-সিম ব্যবহার করে এক নেটওয়ার্ক থেকে অন্য নেটওয়ার্কে খুব সহজে সুইচ করা যাবে। একটি ই-সিম এ একই সাথে কমবেশি ৫টি ভার্চুয়াল সিম কার্ড এর তথ্য সংরক্ষণ করা যাবে। এর মানে হলো, নেটওয়ার্ক সিগনাল নেই এমন এলাকায় গেলে সকল সিম থেকে যে সিমের নেটওয়ার্ক আছে, সে সিম ব্যবহার করা যাবে ই-সিম এর কল্যাণে।

বিশেষ করে ভ্রমণের সময় লোকাল নেটওয়ার্কে সুইচ করার ব্যাপারটিকে সহজ করে দেয় ই-সিম সেবা। এই ক্ষেত্রে ই সিমের মাধ্যমে লোকাল সিমে সুইচ করা যাবে ফিজিক্যাল সিম পরিবর্তন না করেই। ই সিম কি তা আমরা আগেই জেনেছি।

এক স্লটে একাধিক সিম ব্যবহারের পাশাপাশি ডুয়েল-সিম ফোনসমূহে ই সিম এর সাথে চিরাচরিত সিম ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। অর্থাৎ একই ফোনে একাধিক ফোন নাম্বার ব্যবহারের সুবিধা থাকছে ই-সিম ব্যবহার করলেও। ব্যক্তিগত যোগাযোগে একটি ফোন নাম্বার অথবা ব্যবসায়িক কাজে অন্য একটি নাম্বার ব্যবহার করতে চাইলে, এমন পরিস্থিতিতে বেশ কাজে আসতে পারে ই-সিম সেবা।

সাধারণ সিমের চেয়ে ই-সিম আকারে বেশ ছোটো। যার ফলে ফোনে বাড়তি ফিজিক্যাল স্পেস পাওয়া যায়। আর এই স্পেস স্মার্টফোন ম্যানুফ্যাকচারারগুলো ব্যাটারি সাইজ বাড়াতে বা নতুন ফিচার সংযুক্ত করতে ব্যবহার করতে পারে। এছাড়াও মোবাইল ফোনে যত হোল কম থাকবে, মোবাইল ফোন তত বেশি ধুলাবালি থেকে সুরক্ষিত থাকবে।

স্মার্টফোনের সাইজ কমিয়ে আনার পাশাপাশি, স্মার্টওয়াচ এর মতো ছোটো আকারের ডিভাইস সমূহেও ই-সিম এর ব্যবহার বেশ সুবিধাজনক হতে পারে। ইতিমধ্যে অ্যাপল তাদের স্মার্টওয়াচ এর বিভিন্ন সিরিজে ই-সিম সেবা যুক্ত করেছে। স্যামসাং মোবাইল কোম্পানি তাদের স্যামসাং গিয়ার এস ২ ও স্যামসাং গিয়ার এস ৩ স্মার্ট ওয়াচেও ই সিম সেবা যুক্ত করেছে।

ই সিমের (e SIM) অসুবিধা সমূহ

ই সিম কি ও ই সিমের সুবিধা জানলাম। প্রত্যেক বিষয়েরই সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধা রয়েছে। ই সিম ও তার ব্যতিক্রম নয়। ই সিমের বেশ কিছু অসুবিধা রয়েছে। মোবাইল অপারেটর পরিবর্তন শুনতে বেশ সহজ মনে হলেও ই সিম ব্যবহার করে মোবাইল অপারেটর পরিবর্তন করা বেশ জটিল একটি প্রক্রিয়া।

সাধারণ সিমের ক্ষেত্রে মোবাইল ফোন কোনো কারণে কাজ না করলে, সিম বের করে তা অন্য মোবাইল ফোনে তুলে সকল গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন, ফোন নাম্বার উদ্ধার করা যায়। কিন্তু ই সিম সাপোর্টেড ফোনের কোনো সমস্যা হলে ই সিম থেকে তথ্য উদ্ধার করা তেমন সহজ নয়।

আপনার গতিবিধি সিম এর সাহায্যে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। এমন সন্দেহ হলে, বেশ সহজে সাধারণ সিম খুলে ফেলা যায়। কিন্তু ই-সিম সাপোর্টেড মোবাইল ফোনের ক্ষেত্রে এমন কোনো সুবিধা নেই। তবে ই সিম সাপোর্টেড মোবাইল ফোন চুরি হয়ে গেলে ছিনতাইকারীরা কোনো তথ্য মুছতে পারবেনা। এটি একটি ই সিমের সুবিধা বা ভাল দিক বলা যেতে পারে।

বন্ধুরা আজকে কানলাম ই সিম কি , এ সিমের সুবিধা , ই সিমের অসুবিধা ও ই সিম সম্পর্কিত সকল বিষয় সম্পর্কে। কেমন লাগলো আজকের আর্টিকেলটি তা কমেন্ট করে জানাবেন।

You might also like